ভারতীয় রেলের electrification ৯৪% শেষ ! চলতি বছরের শেষে ভারত হবে পৃথিবীর largest green railway




সম্প্রতি ভারতীয় রেল মন্ত্রক জানিয়েছে ভারতে  রেলের প্রায় ৯৪% ইলেক্ট্রিফিকেশনের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। সব ঠিক থাকলে বাকি 8% কাজও আগামী কয়েক মাসেই শেষ হয়ে যাবে। এটা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলিতে বিশেষত বাংলার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তেমন একটা আলোচনায় হয়নি , ভোটের আবহে কতকটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে বিষয়টা। তবে সত্যিই যদি ১০০ শতাংশ ইলেক্ট্রিফিকেশন শেষ হয় তবে ভারত সমগ্র বিশ্বের কাছে , Largest Green Railway হিসেবে নজির সৃষ্টি করবে।



এখন এই electrification আদতে কী? সহজ কথায় এর অর্থ দাঁড়ায় , ইতমধ্যে ভারতীয় রেলের অধীনে যে সমস্ত অবৈদুতিন বা ডিজেল চালিত ট্রেন রয়েছে তাদের পুরোপুরি বিদ্যুৎ চালিত করে তোলা। বলা ভালো ,  ডিজেলের পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন ব্যাবহারে নিয়ে আসা।



কিন্তু , কেন electrification এর পথে হাঁটছে রেল? এর সহজ সাধারন উত্তর হল , পরিবেশ রক্ষা। অপু দুর্গার প্রথম রেল দেখবার দৃশ্য মনে পড়ে , কাশবনের মধ্যে দিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে , কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে। সেদিনের সেই কয়লা চালিত ট্রেন হোক কিংবা আজকের এই ডিজেল চালিত ট্রেন…এই ধোঁয়া যে পরিবেশের পক্ষে মোটেও ভালো নয় তা আপনি মানতে বাধ্য। তাই পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত রেলের।



তবে হঠাৎ?.... না! হঠাৎ মোটেও নয়। ভারতীয় রেলের ইলেক্ট্রিফিকেশন এর কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল সালে১৯২৫ সালে। শুরুর দিকে দেড় হাজার ভোল্ট ডিসির বৈদ্যুতিক লাইন বসানো হয়েছিল। পরে তা রূপান্তরিত করা হয় তিন হাজার ভোল্টে। ১৯৫৭ , ভারতীয় রেল উদ্যোগ নেয় সব বৈদ্যুতিক লাইনকে ২৫ কিলোভোল্ট এসি ট্রাকশনে রূপান্তরিত করার। প্রসঙ্গত , ভারতের প্রথম বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন চলেছিল সেন্ট্রাল রেলওয়েতে। বম্বে টার্মিনাস (বর্তমানে যেটি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস নামে পরিচিত) থেকে কুরলা পর্যন্ত।




১৩,৪৫১৮ কিমি সুবিস্তৃত রেলপথ , ৭৩৩৫ এর বেশি স্টেশন , প্রতিদিন ১৩, ৫২৩টির বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং ৯১৪৬টির বেশি মালবাহী ট্রেনের নিত্য পরিচালনা! ভাবুন তো একটি ডিজেল লোকোমোটিভ যদি প্রতি কিমিতে ৪৯ গ্রামও কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে তবে সবমিলিয়ে সংখ্যাটা প্রতিদিন কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। আর শুধু কার্বন ডাই অক্সাইডই তো নয় , সেই তালিকায় রয়েছে SO2 এবং Nitrogen dioxide (NO2) ও। সমীক্ষা বলছে  এই Nitrogen dioxide  পৃথিবীর ওজন স্তরের জন্য CO2 অপেক্ষা প্রায় ২৪০ গুন বেশি ক্ষতিকারক। এছাড়া অন্যান্য দূষণ তো আছেই।




২০১৪ থেকে রেলের electrification এর পেছনে ভারত প্রায় ৪৬৪২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। এমনকি মোদী সরকারের শেষ অন্তর্বর্তী বাজেটেও এই রেল electrification নিয়ে প্রায় ৬৫০০ - ৮০৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।দেশে এখন প্রায় ৬৫ হাজার ১৪১ কিমি ব্রড গেজ নেটওয়ার্ক রয়েছে। যার মধ্যে ৫৯-৬১ হাজার ৮১৮ কিমি রেলপথে electrification এর কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কিমি পথে electrification এর কাজ চলছে। রেল কর্তৃক প্রকাশিত একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে , আগে ২০০৪-১৪ সালে মধ্যে যেখানে প্রতিদিন ১.৪২কিমি পথে electrification এর কাজ চলত সেখানে ২০২২-২৩ এ রেলের electrification এর কাজ হয়েছে প্রতিদিন ১৪ কিমির মতো।




১ এপ্রিল ২০২৩ সালে , রেলের একটি তথ্যের নিরিখে , ভারতীয় রেল বর্তমানে সক্রিয়ভাবে ৪৫৯টি পরিকাঠামোগত রেল প্রজেক্টে কাজ করছে। যার মধ্যে ১৮৯ নিউ লাইন প্রজেক্ট , ৩৯টি রেল গেজ প্রজেক্ট এবং ২৩১টি ডুব্লিং প্রজেক্ট। এই প্রতিটিই প্রজেক্ট সর্বমোট পরিসর ৪৬৩৬০কিমি বিস্তৃত। যার জন্য খরচ বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ৭.১৮কোটির মতো।


                                                                                                                                                                                     কারণ , -


১. সময়ের সঙ্গে তাপবিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্র। বিপুল পরিমাণে সৌরবিদ্যুত, জলবিদ্যুত্, পারমাণবিক বিদ্যুত্ উত্পাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে।


৩. কস্ট এফিসিয়েন্ট'। একটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এক কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে একটি ট্রেনের পিছনে খরচ হয় মাত্র ২০ ইউনিট বিদ্যুৎ। রেলকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৬.৫০ টাকা দিতে হয়। সুতরাং এক কিলোমিটার যেতে খরচ হয় ১৩০ টাকা।


 উল্টোদিকে, একটি ডিজেল ইঞ্জিন ট্রেন চালাতে এক কিলোমিটার যেতে ৩.৫ থেকে ৪ লিটার ডিজেল খরচ হয়। যার দাম প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। তাই ডিজেলের চেয়ে বিদ্যুতের মাধ্যমে ট্রেন চালানো সস্তা। এই কারণেই রেলওয়ে দ্রুত প্রত্যন্ত রেলপথে বিদ্যুতায়ন করছে। রেলের কাছে জমির অভাব নেই। সেই জমিকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে সৌর প্যানেল বসানো যেতে পারে। 




Post a Comment

0 Comments